মঙ্গলবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৩

ভালোবাসার অনুভূতি

বসন্তের নব-পল্লবের কচি আমেজ
ভালোবাসার নগ্ন শরীর
উপভোগ করেছি ---
অজন্তা চিত্র নয়, ইংরেজি নীল ছবি নয়;
আমার মানসীর সর্বাঙ্গে
হাত বুলেয়েছি যৌবন শিখরে ;
ভালোবাসার মাতৃ-সুধা
নারী রূপে ধরা দেয় ;
কামণার আর্তনাদ আত্মনাদ হয়ে পড়ে
সুখানুভূতির বালুচরে ||

~~~~~ 000 ~~~~

সোমবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৩

অধিকার

আনন্দের বিষম জ্বালা সহ্য নয় ;
       তবুও বিশ্বাস হয় না
নগ্ন শরীরে উত্তর পুরুষের অধিকার ;

চোখের সামনেই ভয়ংকর অবিশ্বাস
       প্রেম ধূসর মায়াবী এক স্বপ্ন ।

নেপকিনে শরীরের ক্লান্ত ঘাম মুছে
 প্রভাত সূর্যের স্নিগ্ধ আভারাশী
 কুয়াশার রক্তিমতায় জড়াজড়ি করছে ;

           ---- এ যেন ------
সত্য পূজারীর সৌন্দর্য্য ঝলসানো
                  এক নিত্য ঘটনা ।।

~~~~~ ০০০০ ~~~~~~

রবিবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৩

নাথুরাম গডসের শেষ জবানবন্দি

সংগৃহীত : 
________________________________________
আমি গান্ধীকে কেন মেরেছি
-----------------------------------------------------------------

সুপ্রীম কোর্টের অনুমতি পাওয়ার পর প্রকাশিত হয় মাননীয় নাথুরাম গোডসের ভাষন --- আমি গান্ধীকে কেন মেরেছি। 60 বছর এটা নিষেদ ছিল! আপনারা সকলেই জানেন --- 30 শে জানুয়ারী, 1948 গোডসে গুলি মেরে গান্ধীজীর হত্যা করেছিলেন। গুলি মেরে উনি ঘটনা স্হল থেকে পালিয়ে যান নি! উনি আত্মসমর্পণ করলেন! গোডসের সঙ্গে আরও 17 জনের বিরুদ্ধে মামলা শুরু হল। মামলা চলাকালীন প্রধান বিচারপতির কাছে অনুরোধ করা হয় যাতে নাথুরাম গোডসে তাঁর বক্তব্য রাখতে পারেন। অনুমতি ত মিলল কিন্তু শর্ত সাপেক্ষ! সরকারের নির্দেশ অনুসারে কোর্টের বাইরে যাওয়া চলবে না। পরে ওনার ছোট ভাই গোপাল গোডসে দীর্ঘদিন মামলা চালানোর পর ---- প্রায় 60 বছর পর অনুমতি পাওয়া যায় সর্ব সমক্ষে রাখার। 

1. নাথুরাম ভাবতেন --- গান্ধীজির অহিংসা ঐ মুসলিম তোষণ নীতি হিন্দুদের কাপুরুষে রূপান্তরিত করে দিচ্ছে। কানপুরে গণেশ শঙ্কর বিদ্যার্থীকে মুসলিমরা নির্মম ভাবে হত্যা করে। আর যে গণেশজী গান্ধীজির ভাব ধারায় প্রভাবিত ছিলেন ---- তাঁর হত্যাকান্ডে গান্ধীজি চুপ রইলেন!

2. 1919 এর জালিয়ানওয়ালা বাগের হত্যাকান্ডে সমস্ত আক্রোশে ফুঁসছিল। এই নৃশংস হত্যাকারী খলনায়ক জেনারেল ডায়ারের বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য গান্ধীকে অনুরোধ করা হয়। কিন্তু পরিস্কার মানা করে দেন! 

3. গান্ধী খিলাফত আন্দোলনকে সমর্থন করে ভারতে সাম্প্রদায়িকতার বীজ বুনলেন! নিজেকে কেবল মুসলিমদের হিতৈষী হিসাবে হাভ-ভাবে বুঝিয়ে দিতেন। কেরালায় মোপলা মুসলিমরা 1500 হিন্দুকে হত্যা 2000 হিন্দুকে ধর্মান্তরিত করল! গান্ধীজি বিরোধীতা পর্যন্ত করলেন না! 

4. কংগ্রেসের ত্রিপুরা অধিবেশনে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোস বিপুল সমর্থনে জয়লাভ করেন। কিন্তু গান্ধীর পছন্দের প্রার্থী ছিল সীতা রামাইয়া! সুভাষ চন্দ্র বোসকে পরে বাধ্য করা হয় ইস্তফা দেওয়ার জন্য। 

5. 23 শে মার্চ, 1931 --- ভগৎ সিংকে ফাঁসী দেওয়া হয়। সারা দেশ এই ফাঁসী আটাকানোর জন্য গান্ধীকে অনুরোধ করেন। গান্ধী ভগৎ সিং এর কার্যকলাপকে অনুচিত মনে করে এই অনুরোধ রাখেন নি! 

6. গান্ধীজি কাশ্মীরের রাজা হরি সিংকে পদত্যাগ করতে বলেন --- কারণ কাশ্মীর মুসলিম বহুল রাজ্য! উনি হরি সিংকে কাশী গিয়ে প্রায়শ্চিত্য করতে বলেন! অথচ হায়দ্রাবাদের নিজামের ক্ষেত্রে চুপ। গান্ধীজির নীতি ধর্ম বিশেষে বদলাত। পরে সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেলের সক্রিয়তায় হায়দ্রাবাদকে ভারতের সঙ্গে রাখা হয়। 

7. পাকিস্তান হিন্দু নিধন যজ্ঞ চলছে তখন। প্রাণ বাঁচাতে বেশ কিছু হিন্দু ভারতে চলে আসে। অস্হায়ী ভাবে আশ্রয় নেয় দিল্লীর মসজিদে। মুসলিমরা এর জন্য বিরোধীতা শুরু করে। ভয়ঙ্কর শীতের রাতে মা-বোন-বালক-বৃদ্ধ সকলকে জোর করে মসজিদ থেকে বের করে দেওয়া হয়। নিরব রইলেন গান্ধী! 
 
8. গান্ধী মন্দিরে কোরান পাঠ ও নামাজ পড়ার ব্যবস্থা করলেন! এর বদলে কোন মসজিদে গীতা পাঠের ব্যবস্থা করতে পারলেন না! অসংখ্য হিন্দু, ব্রাহ্মণ এর প্রতিবাদ করেছিল ---- গান্ধী আমলই দিলেন না! 

9. লাহোর কংগ্রেসে সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটৈলের জয় হল, কিন্তু গান্ধী জেদ করে এই পদ নেহেরুকে দিলেন। নিজের ইচ্ছা সফল করানোতে উনি সিদ্ধ হস্ত ছিলেন। ধর্না, অনশন, রাগ, বাক্যালাপ বন্ধ করা ---- এই কলা গুলির সাহায্যে যখন তখন ব্লাকমেল করতেন। সিদ্ধান্তের ঠিক ভুলও বিচার করতেন না। 

10. 14 ই জুন, 1947 দিল্লীতে অখিল ভারতীয় কংগ্রেস সমিতির বৈঠক ছিল। আলোচনার বিষয় ছিল ভারত বিভাজন। এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অদ্ভুত ভাবে দেশ ভাগের প্রস্তাব গান্ধী সমর্থন করলেন। এই ইনই একদিন বলেছিলেন ---- দেশ ভাগ করতে গেলে ওনার মৃত দেহের ওপর করতে হবে! লাখ লাখ হিন্দু মারা গেলেও উনি চুপ থেকেছেন! মুসলিমদের কখনো শান্তি বজায় রাখার আদেশ দেন নি ---- যত আদেশ উপদেশ শুধু হিন্দুদের ওপর! 

11. ধর্ম নিরপেক্ষতার ছদ্মবেশে "মুসলিম তোষণ" এর জন্ম দেন গান্ধী। যখন হিন্দী ভাষাকে রাষ্ট্র ভাষা করার বিরোধীতা করল মুসলিমরা ---- স্বীকার করলেন গান্ধী! অদ্ভুত এক সমাধান দিলেন --- "হিন্দুস্তানী" (হিন্দী ও' উর্দুর খিচরি)!  বাদশাহ রাম, বেগম সীতা বলার চল শুরু হল! 

12. কিছু মুসলমানের বিরোধীতায় মাথা নত করলেন আবার ---- "বন্দে মাতরম" কে জাতীয় সংগীত হতে দিলেন না! 

13. গান্ধীজি বেশ কয়েকবার ছত্রপতি শিবাজী, মহারাণা প্রতাপ, গুরু গোবিন্দ সিংহকে পথভ্রষ্ট দেশভক্ত বলেছেন! কিন্তু সেখানে মোহাম্মদ আলি জিন্নাহকে "কায়দে আজম" বলে ডাকতেন! 

14. 1931 এ জাতীয় কংগ্রেস স্বাধীন ভারতের জাতীয় পতাকা কেমন হবে  তা নির্ধারণ করার জন্য একটি কমিটি তৈরী করে। এই কমিটি সর্ব সম্মতিতে ঠিক করেন ---- গেরুয়া বস্ত্রের পতাকা হবে যার মাঝখানে চরখা থাকবে। কিন্তু গান্ধীজির জেদে সেটা তেরঙ্গা করতে হয়! 

15. যখন সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটৈলের উদ্যোগে সোমনাথ মন্দিরের পুননির্মাণের প্রস্তাব সংসদে রাখা হয় ----- তখন উনি বিরোধীতা করলেন! এমনকি উনি মন্ত্রীমন্ডলেও ছিলেন না! কিন্তু অদ্ভুত ভাবে 13 ই জানুয়ারী, 1948 এ আমরণ অনশন শুরু করলেন --- যাতে সরকারী খরচে দিল্লীর মসজিদ তৈরী হয়! কেন এই দ্বিচারিতা? উনি হিন্দুকে হয়ত ভারতীয় ভাবতেনই না!

16. গান্ধীজির মধ্যস্হায় ঠিক হয় ---- স্বাধীনতার পর ভারত পাকিস্তানকে 75 কোটি টাকা দেবে। 20 কোটি শুরুতেই দেওয়া হয়। বাকি ছিল 55 কোটি। কিন্তু 22 শে অক্টোবর, 1947 পাকিস্তান কাশ্মীর আক্রমণ করে! পাকিস্তানের এই বিশ্বাস ঘাতকতার জন্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রীমন্ডল সিদ্ধান্ত নেয় বাকী পয়সা আর পাকিস্তানকে দেওয়া হবে না। কিন্তু সেই বেঁকে বসলেন লাঠিধারী! শুরু করলেন আবার ব্লাকমেল --- আবার অনশন। শেষে সরকার বাকি 55 কোটি টাকাও বিশ্বাসঘাতক পাকিস্তানকে দিতে বাধ্য হল! 

এইরকম জিন্নাহ ও' অন্ধ পাকিস্তান প্রীতি দেখে বলতে পারি উনি প্রকৃতপক্ষে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপিতা ছিলেন ---- ভারতের নয়। প্রতিটি মুহুর্তে পাকিস্তানের সমর্থনে কথা বলেছেন ---- সে পাকিস্তানের দাবী যতই অন্যায় হোক! 

আদালতে দেওয়া নাথুরাম গোডসের কিছু বয়ানের বঙ্গানুবাদ। 

" আমি ওনাকে অনেক শ্রদ্ধা করি। কিন্তু কোন দেশভক্তকে দেশ ভাগ ও' একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের পক্ষপাতিত্ব করার অনুমতি দিতে পারি না। আমি গান্ধীকে মারি নি ---- বধ করেছি --- বধ। গান্ধীজিকে বধ করা ছাড়া আমার কাছে আর কোন উপায় ছিল না। উনি আমার শত্রু ছিলেন না ---- কিন্তু ওনার সিদ্ধান্ত দেশের বিপদ ডেকে আনছিল। যখন কোন ব্যক্তির কাছে আর কোন রাস্তা থাকে না তখন ঠিক কাজ করার ভুল রাস্তা নিতে হয়। 

মুসলিম লীগ ও' পাকিস্তান নির্মাণে গান্ধীজির সমর্থনই আমাকে বিচলিত করেছে। পাকিস্তানকে 55 কোটি টাকা পাইয়ে দেবার জন্য গান্ধীজি অনশনে বসেন। পাকিস্তানে অত্যাচারের জন্য ভারতে চলে আসা হিন্দুদের দুর্দশা আমাকে স্তব্ধ করে দিয়েছিল। গান্ধীজির মুসলিম লীগের কাছে মাথা নত করার জন্য অখন্ড হিন্দু রাষ্ট্র সম্ভব হয়নি। ছেলের মাকে টুকরো করে ভাগ করতে দেখা আমার অসহনীয় ছিল। নিজ দেশেই যেন বিদেশী হয়ে গেলাম। 

মুসলিম লীগের সমস্ত অন্যায় আব্দার উনি মেনে চলছিলেন। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম ---- ভারত মাতাকে পুনরায় টুকরো হওয়ার হাথ থেকে ও দুর্দশার হাত থেকে বাঁচানোর জন্য আমাকে গান্ধীজির বধ করতে হবে। আর সেইজন্যই আমি গান্ধীকে বধ করেছি। 

আমি জানতাম এর জন্য আমার ফাঁসী হবে এবং আমি এর জন্য প্রস্তুত। আর এখানে যদি মাতৃভূমির রক্ষা করা অপরাধ হয় ----- তাহলে এরকম অপরাধ আমি বার বার করব ---- প্রত্যেক বার করব। আর যতক্ষণ না সিন্ধু নদী অখন্ড ভারতের মধ্যে না বাহিত হয় ---- আমার অস্থি ভাসিও না। আমার ফাঁসির সময় আমার এক হাতে কেশরীয় পতাকা ও' অন্য হাতে অখন্ড ভারতের মানচিত্র যেন থাকে। আমার ফাঁসিতে চড়ার আগে অখন্ড ভারত মাতার জয় বলতে চাই। 

হে ভারত মাতা --- আমার খুব দুঃখ যে আমি কেবল এইটুকুই তোর সেবা করতে পেরেছি ।"

"মেরে তোর হাত-পা ভেঙে দেবো। ভিখিরী কোথাকার।"

এটা কোনো প্রকারে আমার লেখা নয় । সংগৃহীত । ভালো লেগেছে তাই আমার ব্লগে পাবলিশ করা । অনধিকার পাবলিশিং এর জন্য আগে থেকেই ক্ষমা চাইছি । ধন্যবাদ ।

"মেরে তোর হাত-পা ভেঙে দেবো। ভিখিরী কোথাকার।"
দিল্লীর বিজয়নগরের এক বস্তি অঞ্চলে ছোট্ট ছেলেটি থাকে।
পরনের শতছিন্ন জামাটি ধূলিধূসরিত।
গতকাল সন্ধ্যের পর থেকে আর এক কণাও খাবার জোটেনি। ক্ষিদে পেটেই রাস্তা দিয়ে একা একা চলছে বাচ্চা ছেলেটি।
ছেলেটির মাত্র ৯ বছর বয়স। সকলে তাকে ভলু নামেই চেনে।
রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎই ভলু লক্ষ্য করে, এক দোকানে গরম গরম সিঙ্গারা ভাজা হচ্ছে।
একেই ক্ষিদেয় পেট চুঁইচুঁই করছে, তার ওপর গরম সিঙ্গারা দেখে ভলুর জিভে জল এসে গেল। মনে হলো কেউ যেন মুখের ভিতরে বয়ে চলা খরস্রোতা নদীটির বাঁধ খুলে নিয়েছে।
"কাকু", দোকানদারকে উদ্দেশ্য করে ভলু নিষ্পাপ গলায় ডেকে উঠলো।
দোকানদার ঠিক ততটাই রূঢ় কণ্ঠে বললেন "কি চাই টা কি?"
ভলু তার অসহায়তার কথা জানিয়ে বললো "আমাকে একটা সিঙ্গারা দেবে? আমার কাছে একটা পয়সাও নেই।"
"এখুনি এখান থেকে বেড়িয়ে যা বলছি"। অত্যন্ত তাচ্ছিল্যের সুরে দোকানদার বলে উঠলেন।
ক্ষুধার্ত ভলুর শুকনো ঠোঁট দুটো দোকানদারের বিশ্বাস অর্জনের শেষ একটা চেষ্টা করলো "কাল রাত থেকে কোনো খাবার পাইনি কাকু, খুব ক্ষিদে পেয়েছে। দাও না একটা সিঙ্গারা।"
"ভাগ এখান থেকে, নাহলে মেরে হাত পা ভেঙে দেবো। সালা ভিখারী।"
ভলু ভয় পেয়ে দু'পা পিছিয়ে যায়।
কিছুক্ষণ পরে দোকানদার নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ক্ষিদের জ্বালায় ভলুর ভয়ও ততক্ষনে বেশ কিছুটা স্তিমিত হয়ে পরেছে।
মনে সাহস সঞ্চয় করে, ছোট্ট ছোট্ট পায়ে ভলু সামনের দিকে এগিয়ে আসে। নিশ্চুপে প্লেট থেকে একটা সিঙ্গারা তুলে নেয়।
কিন্তু এই ঘটনা দোকানদারের নজর এড়ালো না। ভয়ানক রেগে গিয়ে তিনি চিৎকার করে উঠলেন "জানোয়ার। সালা চোর। এত সাহস হয় কি করে তোর"। গর্জে উঠে ভলুর হাত মুচড়িয়ে দেয় তিনি।
"কাকু ছেড়ে দাও আমার হাত। আমি চুরি করিনি, সিঙ্গারা গুলোতে হাত দিয়েছিলাম কেবল।" আত্মপক্ষ সমর্থনের ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকে ভলু।
"ওহ মা…আমার হাত"। যন্ত্রণায় ডুকরে কেঁদে ওঠে ছোট্ট ছেলেটি।
কিন্তু দোকানদার তাতে কর্ণপাত পর্যন্ত করলেন না। নিষ্ঠুর ভাবে ভলুর হাতে-পিঠে আঘাত করতে লাগলেন। ভলুর কনুই পর্যন্ত মুচড়ে দিলেন।
ছোট্ট ছেলেটির অবস্থা তখন মৃতপ্রায়।
ছোট্ট দুটো হাত দিয়ে মাথাটা ঢেকে রাস্তাতেই বসে পড়লো ভলু। যেন বলতে চাইছে, "আমাকে যত খুশি মারো, কিন্তু আমার মাথায় আঘাত করো না।"
মার খেতে খেতে ভলুর চারিদিক যেন কিছুক্ষনের জন্য অন্ধকার হয়ে গেল। সে আর নিশ্বাস-প্রশ্বাসও ঠিক ভাবে নিতে পারছে না।
সারা শরীরে অসহ্য যন্ত্রণা। মুখ দিয়ে রক্ত পড়ছে। পিঠে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন। সম্ভবত ভলুর হাতটাও ভেঙে গেছে।
তীব্র যন্ত্রণায় কেঁদে ওঠে ভলু। শরীরের শেষ শক্তিটুকু দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে ছুটতে থাকে ভলু। নিজের বাড়ির উদ্দেশ্যে ছুটতে থাকে।
দিল্লীর এক বস্তিতে থাকে ভলু। নোংরা , অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের মধ্যেই সে বড় হয়ে উঠছে। সরু সরু গলি ঘুপচির মধ্যে দুজন মানুষ পর্যন্ত পাশাপাশি হেঁটে যেতে পারবে না। সেই পথ দিয়েই ভলু দৌঁড়ে চলেছে।
একটা ছাদের তলায় এসে ভলু থামলো। এটাই নাকি এই ছোট্ট ছেলেটির ঘর। পুরোনো জীর্ণ একটা প্লাস্টিকের চেয়ারের ওপর দাঁড়িয়ে পড়লো। দেওয়ালে টাঙানো মায়ের হাসিমুখের ছবির সামনে দাঁড়িয়ে ভলু অঝোরে কাঁদতে থাকে।
"মা তুমি কোথায়?"
"আমার খুব ক্ষিদে পেয়েছে।"
"মা, তুমি জানো, ওই দোকানদারটার কাছে একটা সিঙ্গারা চেয়েছিলাম বলে আমার হাত ভেঙে দিয়েছে।"
"আমাকে জানোয়ার বলেছে। বলেছে আমি নাকি চোর। আমাকে খুব মেরেছে, মা।"
"খুব যন্ত্রনা হচ্ছিলো আমার। আমি আর সহ্য করতে পারছিলাম না। আমার কনুই পর্যন্ত মুচড়ে দিয়েছে।"
"মা , তুমি তো আমাকে সবসময় বলতে আমি ঠিক মতো খাবার না খেলে, তুমি চলে যাবে। আমি কথা দিচ্ছি তুমি যা বলবে সব করবো, যা খেতে দেবে সব খাবো। তুমি ফিরে এসো মা"।
দেওয়ালে টাঙানো মা এর নিষ্প্রাণ ছবি কেবল অসহায়ের মতো হাসতে থাকে।
হঠাৎই, ভলুর এই ছোট্ট ঘরে এক ভদ্রমহিলা আসলেন।
তিনি একজন সমাজ সেবিকা।
ভলুর দিকে তাকিয়ে বললেন "তুমি তোমার মা-বাবাকে একটু ডেকে দেবে? ওনাদের সাথে কিছু কথা আছে।"
ভলু কিছুই বলে না। নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে ক্রমাগতভাবে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে চলে।
"কি হয়েছে তোমার হাতে?"
ভলু তাও কোনো উত্তর দেয় না। যন্ত্রণায় সে কেঁদেই চলেছে।
ভদ্রমহিলা ভলুকে সাথে করে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান। প্রাথমিক চিকিৎসার পর ডাক্তারবাবু ভলুর হাতে প্লাস্টার করে দিলেন।
মিসেস ডিসুজা ভলুর জীবন সম্পর্কে সবকিছু জানতে পারলেন। এক মাতৃস্নেহে তাঁর হৃদয় উদ্বেলিত হয়ে ওঠে।
তিনি ভলুকে জিজ্ঞাসা করলেন
"তুমি পড়াশোনা করবে?"
ভলু মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়।
কিন্তু পরমুহূর্তেই কি যেন একটা চিন্তা করতে থাকে।
"আর খাবার"? ভলু খুব উদ্বিগ্ন হয়ে জানতে চায়।
"তোমাকে আর খাবার নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। শুধু মন দিয়ে পড়াশোনা করো। কেমন?"
"আর আমাকে এখন থেকে মা বলে ডেকো"। আলতো করে নিজের স্নেহের হাতটা ভলুর মাথায় রেখে সহাস্য মুখে তাকালেন মিসেস জেব্রিয়ানা ডিসুজা।
"ঠিকাছে মা"। ভলু অনায়াসে এমন ভাবে বলে উঠলো যেন তার রোজকার যাবতীয় সমস্যার সমস্ত সমাধান সে খুঁজে পেয়ে গেছে।
ভলু আর বস্তির ছেলে নেই।
কনভেন্ট স্কুল থেকে পড়াশোনা করে সে এখন উচ্চশিক্ষার জন্য লন্ডনে পারি দিয়েছে।
ভলু এখন একজন উচ্চশিক্ষিত যুবক। লন্ডন থেকে ফিরে এসে সে চশমার একটি নতুন ব্র্যান্ডের প্রতিষ্ঠা করে। তার নতুন মা, হয়তো সাক্ষাৎ ভগবান, তাঁর নাম অনুযায়ী সে তার ব্র্যান্ডের নামকরণ করে 'জেব্রিয়ানা'। বর্তমান যুগে অতিরিক্তি মোবাইল আর ল্যাপটপ ব্যবহারের ফলে চোখে যে অতিরিক্ত প্রেসার পরে, তা রোধ করতে এই ব্র্যান্ডের চশমার জুড়ি মেলা ভার।
"আজকের খাবারের কন্টেনারগুলো সব রেডি তো?" ভলু ভাস্কর তার এসিস্ট্যান্টকে জিজ্ঞাসা করে।
"হ্যাঁ স্যার। প্রায় রেডি। আর মাত্র চারটে কন্টেনার প্যাক করা বাকি" এসিস্ট্যান্ট জানায়।
"ঠিক আছে। তাড়াতাড়ি করো। আজ আমরা মদনপুর বস্তিতে যাবো। সমস্ত খাবার ওখানকার ফুটপাতে যারা থাকে, তাদের মধ্যে ভাগ করে দেবো। আর যদি কিছু বেঁচে যায়, তবে রাতে যারা ওখানে আশ্রয় নেয় তাদেরকেও দিয়ে আসবো।" ভলু ভাস্কর নির্দেশ দেয় তার এসিস্ট্যান্টকে এবং নিজের কোম্পানি জেব্রিয়ানার অন্যুয়াল রেভিনিউ চেক করতে শুরু করেন।
বেশিরভাগ সময়ই টেকনিশিয়ান, রিসার্চার আর সাপ্লায়ারদের দ্বারাই পরিবেষ্টিত থাকে এখন ভলু। তারা অবশ্য তাকে মিস্টার ভাস্কর নামেই চেনেন।
ভলুর মায়ের সেই ছবিটা আজও দেওয়ালে সুন্দর ভাবে টাঙানো আছে। তার কেবিনে চেয়ারের ঠিক পেছনটাতে।
কিন্তু আজ আর মায়ের মুখে সেই অসহায়ের হাসিটা নেই। বরং তাঁর চোখে মুখে গর্বের যে উজ্জ্বল হাসিটা দেখা যাচ্ছে তা পরিমাপ করা সম্ভব নয় কোনোভাবেই।
মায়ের কাছে মিস্টার ভাস্কর আজও সেই ছোট্ট ভলু। চিরকাল তাইই থাকবে।
আমি আগে মনে করতাম, ঈশ্বরের অস্তিত্ব হয়তো নেই। কিন্তু আজ বুঝতে পারি, কোথাও একটা চূড়ান্ত কোনো শক্তি অবশ্যই বিরাজ করছে। উপযুক্ত মুহূর্তে আমাদের সাহায্য করার জন্য সে তার সৈনিককে ঠিক প্রেরণ করবে।
জীবনে এই সত্যিটাই হয়তো শিখতে গিয়ে খুব দেরি হয়ে গেলো।


অখন্ড ভারতবর্ষের ইতিহাস

আফগানিস্তানকে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয় ১৮৭৬ সালে, নেপাল বিচ্ছিন্ন হয় ১৯০৪ সালে, ১৯০৬ সালে ভুটান, ১৯০৭ সালে তিব্বত (আংশিক), ১৯৩৫ সালে তিব্বত (বাকী অংশ), মায়ানমার ১৯৩৭ সালে এবং সবশেষে পাকিস্তান বিচ্ছিন্ন হয় ১৯৪৭ সালে। সবশেষে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জন্ম হয়।

শ্রীলঙ্কার অতীতে নাম ছিল সিংহলদ্বীপ যা পরবর্তীকালে সিলন(Ceylon) নামে পরিচিত হয়েছিল। অশোকের রাজত্বকালে এর নাম ছিল তাম্রপর্ণী। অশোকের পুত্র মহেন্দ্র সেখানে গেছিলেন বৌদ্ধ ধর্ম প্রচার করতে। 

আফগানিস্তানের প্রাচীন নাম ছিল উপগণস্থান। কান্দাহার ছিল গান্ধার। ১৮৭৬ সালে ব্রিটেন ও রাশিয়ার মধ্যে গান্দামক চুক্তির ফলে আফগানিস্তানকে একটি পৃথক দেশ হিসেবে মেনে নেওয়া হয়। 

 মায়ানমার প্রাচীনকালে ব্রহ্মদেশ নামে পরিচিত ছিল। ১৯৩৭ সালে এটিকে পৃথক দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। প্রাচীনকালে আনন্দব্রত নামক হিন্দু রাজা এখানে শাসন করেছেন। 

নেপাল যার প্রাচীন নাম ছিল দেওধর সেখানকার লুম্বিনিতে বুদ্ধ ও জনকপুরে সীতা জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫১ সালে মহারাজ ত্রিভূবন সিংহ নেপালের ভারতে সংযুক্তিকরণের আবেদনকে নেহরু প্রত্যাখ্যান করেন। 

তিব্বতের প্রাচীন নাম ছিল ত্রিবিষ্টম। ১৯০৭ সালে ব্রিটেন ও চীনের মধ্যে একটি চুক্তির ফলে তিব্বতের একটি অংশ চীন ও আরেকটি অংশ লামাকে দেওয়া হয়। 

সংস্কৃতে ভূ উত্থান শব্দ থেকে নামকরণ হয় ভুটান, যাকে ১৯০৬ সালে একটি পৃথক দেশ হিসেবে ব্রিটিশরা মান্যতা দেয়।

#সংগৃহীত 

ভারত বর্ষের প্রায় ৪ হাজার বছরের রাজত্বকাল

মহাভারতে উল্লেখিত কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের পরবর্তী  রাজাদের তালিকাঃ ইন্দ্রপ্রস্থের শেষ রাজা যশপাল। যুধিষ্ঠির থেকে যশপাল পর্যন্ত ১২৪ জন রাজা রাজত্ব করেছিলেন মোট ৪,১৭৫ বছর ৯ মাস ১৪ দিন। এরই মধ্যে রাজা যুধিষ্ঠির প্রভৃতি আনুমানিক ৩০ পুরুষ ১৭৭০ বছর ১১ মাস ১০ দিন রাজত্ব করে।  

০১। রাজা যুধিষ্ঠির = ৩৬ বছর ৯ মাস ১৪ দিন।
০২। রাজা পরীক্ষিত = ৬০ বছর ৮ মাস ২৫ দিন।
০৩। রাজা জনমেজয় = ৮৪ বছর ৭ মাস ২৩ দিন।
০৪। রাজা অশ্বমেধ = ৮২ বছর ৮ মাস ৩২ দিন।
০৫। দ্বিতীয় রাম = ৮৮ বছর ২ মাস ৮ দিন।
০৬। ছত্রমল = ৮১ বছর ১১ মাস ২৭ দিন।
০৭। চিত্ররথ = ৭৫ বছর ৩ মাস ১৮ দিন।
০৮। দুষ্টশৈল্য = ৭৫ বছর ১০ মাস ২৪ দিন।
০৯। রাজাউগ্র সেন = ৭৮ বছর ৭ মাস ২১ দিন।
১০। শূরসেন = ৭৮ বছর ৭ মাস ২১ দিন।
১১। ভুবনপতি = ৬৯ বছর ৫ মাস ৫ দিন।
১২। রণজিৎ = ৬৫ বছর ১০ মাস ৪ দিন।
১৩। ঋক্ষক = ৬৪ বছর ৭ মাস ৪ দিন।
১৪। সুখদেব = ৬২-০-২৪
১৫। নরহরিদেব = ৫১-১০-০২
১৬। সুচিরথ = ৪২-১১-০২
১৭। শূরসেন (২য়) = ৫৮-১০-০৮
১৮। পর্বতসেন = ৫৫-০৮-১০
১৯। মেধাবী = ৫২-১০-১০
২০। সোনচীর = ৫০-০৮-২১
২১। ভীমদেব = ৪৭-০৯-২০
২২। নৃহরিদেব = ৪৫-১১-২৩
২৩। পূর্ণমল = ৪৪-০৮-০৭
২৪। করদবী = ৮৮-১০-০৮
২৫। অলংমিক = ৫০-১১-০৮
২৬। উদয়পাল = ৩৮-০৯-০
২৭। দুবনমল = ৪০-১০-২৬
২৮। দমাত = ৩২-০-০
২৯। ভীমপাল = ৫৮-০৫-০৮
৩০। ক্ষেমক = ৪৮-১১-২১ 

পাণ্ডু বংশের রাজত্ব এখানেই শেষ হয়ে যায়। রাজা ক্ষেমকের প্রধান মন্ত্রী বিশ্রবা ক্ষেমক রাজাকে নিহত করে সিংহাসন অধিকার করে ও পরবর্তীতে তাঁর ১৪ পুরুষ ৫০০ বছর ৩ মাস ১৭ দিন রাজত্ব করে।

১। বিশ্রবা = ১৭-০৩-২৯
২। পুরসেনী = ৪২-০৮-২১
৩। বীরসেনী = ৫২-১০-০৭
৪। ফবঙ্গশায়ী = ৪৭-০৮-২৩
৫। হরিজিৎ = ৩৫-০৯-১৭
৬। পরমসেনী = ৪৪-০২-২৩
৭। সুখপাতাল = ৩০-০২-২১
৮। কদ্রুত = ৪২-০৯-২৪
৯। সজ্জ = ৩২-০২-১৪
১০। ফমরচূড় = ২৭-০৩-১৬
১১। অমীপাল = ২২-১১-২৫
১২। দশরথ = ২৫-০৪-১২
১৩। বীরসাল = ৩১-০৮-১১
১৪। বীরসালসেন = ৪১-০০-১৪

রাজা বীরসাল সেনের প্রধান মন্ত্রী বীরমহা প্রধান তাঁহাকে হত্যা করে রাজ্যাধিকার করে। তাঁর বংশ ১৬ পুরুষ ৪৪৫ বৎসর ৫ মাস ৩ দিন রাজত্ব করে।

১। রাজা বীরমহা = ৩৫-১০-০৮
২। অজিত সিংহ = ২৭-০৭-১৯
৩। সর্বদত্ত = ২৮-০৩-১০
৪। ভুবনপতি = ১৫-০৪-১০
৫। বীরসেন (প্রথম) = ২১-০২-১৩
৬। মহীপাল = ৪০-০৮-০৭
৭। শত্রুশাল = ২৬-০৪-০৩
৮। সঙ্গরাজ = ১৭-০২-১০
৯। তেজপাল = ২৮-১১-১০
১০। মানিক চাঁদ = ৩৭-০৭-২১
১১। কামসেনী = ৪২-০৫-১০
১২। শত্রুমর্দন = ০৮-১১-১৩
১৩। জীবনলোক = ২৮-০৯-১৭
১৪। হরিরাও = ২৬-১০-২৯
১৫। বীরসেন (২য়) = ৩৫-০২-২০
১৬। আদিত্যকেতু = ২৩-১১-১৩

প্রয়োগের রাজা ‘ধন্ধব’ মগধদেশের রাজা আদিত্য কেতুকে হত্যা করে রাজ্যাধিকার করে। তাঁহার বংশ ৯ পুরুষ, ৩৭৪ বছর ১১ মাস ২৬ দিন রাজত্ব করে। 

১। রাজা ধন্ধর = ৪২-০৭-২৪
২। মহর্ষি = ৪১-০২-২৯
৩। সনরচ্চী = ৫০-১০-১৯
৪। মহাযুদ্ধ = ২০-০৩-০৮
৫। দূরনাথ = ২৮-০৫-২৫
৬। জীবনরাজ = ৪৫-০২-০৫
৭। রুদ্রসেন = ৪৭-০৪-২৮
৮। অরীলক = ৫২-১০-০৮
৯। রাজপাল = ৩৬-০০-০০

সামন্ত মহান পাল রাজা রাজপালকে হত্যা করে রাজ্যাধিকার করে। সামন্ত মহান পালের ১ পুরুষ ১৪ বছর রাজত্ব করেছেন ও তাঁর কোন বৃদ্ধি নেই। এরপর রাজা বিক্রমাদিত্য অবন্তিকা (উজ্জায়নী) হইতে আক্রমণ চালাইয়া রাজা মহানপালকে হত্যা করে রাজ্যাধীকার করেন। তাঁহার বংশ ১ পুরুষ ৩৯ বছর রাজত্ব করেন। তাঁহারও কোন বৃদ্ধি নাই। শালিবাহনের মন্ত্রী সমুদ্রপাল, যোগীপৈঠনের রাজা বিক্রমাদিত্যকে হত্যা করে রাজ্যাধিকার করেন এবং তাঁহার বংশ ১৬ পুরুষ, ৩৭২ বছর, ৪ মাস ২৭ দিন রাজত্ব করেন। 

১। সমুদ্রপাল = ৫৪-০২-২০
২। চন্দ্রপাল = ৩৬-০৫-০৪
৩। সাহায়পাল = ১১-০৪-১১
৪। দেবপাল = ২৭-০১-১৭
৫। নরসিংহপাল = ১৮-০০-২০
৬। সামপাল = ২৭-০১-১৭
৭। রঘুপাল = ২২-০৩-২৫
৮। গোবিন্দপাল = ২৭-০১-১৭
৯। অমৃতপাল = ৩৬-১০-১৩
১০। বলীপাল = ১৩-০৮-০৪
১১। মহীপাল = ১৩-০৮-০৪

রাজা মহাবাহু রাজ্য পরিত্যাগ করিয়া তপস্যার্থে বনে গমন করেন। ইহা শুনিয়া বঙ্গ দেশের রাজা আধীসেন ইন্দ্রপ্রস্থে আসিয়া নিজে রাজত্ব করেন। তাঁর বংশ ১২ পুরুষ, ১৫১ বৎসর ১১ মাস ২ দিন রাজত্ব করে। 

১। রাজা আধীসেন = ১৮-০৫-২১
২। বিলাবলসেন = ১২-০৪-০২
৩। কেশবসেন = ১৫-০৭-১২
৪। মাধবসেন = ১২-০৪-০২
৫। ময়ূরসেন = ২০-১১-২৭
৬। ভীমসেন = ০৫-১০-০৯
৭। কল্যানসেন = ০৪-০৮-২১
৮। হরিসেন = ১২-০০-২৫
৯। ক্ষেমসেন = ০৮-১১-১৫
১০। নারায়ণসেন = ০২-০২-২৯
১১। লক্ষ্মীসেন = ২৬-১০-০০
১২। দামোদর সেন = ১১-০৫-১৯

রাজা দামোদরসেন তাঁর পাত্রমিত্রদিগকে অনেক কষ্ট দিতেন। এই নিমিত্ত তাঁর জনৈক পাত্রমিত্র দীপ্তসিংহ সৈন্য সংগ্রহ করিয়া তাঁহার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে ও তাঁকে যুদ্ধে নিহত করে স্বয়ং রাজত্ব করেন এবং  তাঁহার বংশ ৬ পুরুষ, ১০৭ বৎসর ৬ মাস ২ দিন রাজত্ব করে। 

১। দীপসিংহ = ১৭-০১-১৬
২। রাজসিংহ = ১৪-০৫-০০
৩। রণসিংহ = ০৯-০৮-১১
৪। নরসিংহ = ১৩-০২-২৯
৬। জীবনসিংহ = ০৮-০০-০১

কোন কারণ বশতঃ রাজা জীবনসিংহ তাঁহার সমস্ত সৈন্য উত্তরদিকে প্রেরণ করেন। বৈরাটের রাজা পৃথ্বীরাজ চৌহান সেই সংবাদ পেয়ে জীবনসিংহকে আক্রমণ করেন এবং তাঁহাকে যুদ্ধে নিহত করিয়া ইন্দ্রপ্রস্থে রাজত্ব করেন এবং তাঁর বংশ ৫ পুরুষ, ৮৬ বৎসর ০ মাস ২০ দিন রাজত্ব করেছেন। 

১। পৃথ্বী রাজ = ১২-০২-১৯
২। অভয়পাল = ১৪-০৫-১৭
৩। দুর্জ্জব পাল = ১১-০৪-১৪
৪। উদয়পাল = ১১-০৭-০৩
৫। যশপাল = ৩৬-০৪-২৭

১২৪৯ সালে গজনীর দুর্গ হতে সুলতান শাহাবুদ্দিন ঘোরী যশপালকে আক্রমণ করে তাঁকে প্রয়োগের দুর্গে বন্ধী করে- অতঃপর সুলতান শাহাবুদ্দিন ইদ্রপ্রস্থে (দিল্লীতে) রাজত্ব করিতে আরম্ভ করে। তাঁর বংশ ৫৩ বৎসর, ১ মাস ও ১৭ দিন রাজত্ব করেছে। 

ইন্দ্রপ্রস্ত তথা আর্যাবর্তের সকল রাজাদের ধারাবাহিক পরিচিতি ও রাজত্ব কালের পরিচয় প্রথম বারের মতো তুলে ধরেছিলেন মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী জী। 

মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী এই তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন রাজপুতনার অন্তর্গত উদয়পুর মেদার রাজ্যের রাজধানী, চিতোরগড়ের শ্রিনাথদ্বার হতে প্রকাশিত ও বিদ্যার্থী সম্মিলিত হরিশ্চন্দ্র চন্দ্রিকা এবং মোহঞ্চন্দ্রিকা নামক পাক্ষিক পত্রিকা হতে। উক্ত পত্রিকাদ্বয়ের সম্পাদক মহাশয় ১৭৮২ বিক্রমাব্দে লিখিত একখানি গ্রন্থ তাহার কোন বন্ধুর নিকট হতে প্রাপ্ত হয়ে তা থেকে সংগ্রহ করে প্রচলিত ১৯৩৯ সালে মুদ্রন করেন।
▪️সংগৃহীত।

-- দারিদ্র্য দহন শিব স্তোত্রম --

 দারিদ্র্যদহনশিবস্তোত্রম্

 বিশ্বেশ্বরায় নরকার্ণবতারণায় কর্ণামৃতায় শশিশেখরধারণায় ।
কর্পূরকান্তিধবল়ায় জটাধরায় দারিদ্র্যদুঃখদহনায়
নমঃ শিবায় ॥১॥

গৌরিপ্রিয়ায় রজনীশকলাধরায় কালান্তকায় ভুজগাধিপকঙ্কণায় ।
গঙ্গাধরায় গজরাজবিমর্দনায় দারিদ্র্যদুঃখদহনায় 
নমঃ শিবায় ॥২॥

ভক্তিপ্রিয়ায় ভবরোগভয়াপহায় উগ্রায় দুর্গভবসাগরতারণায় ।
জ্যোতির্ময়ায় গুণনামসুনৃত্যকায় দারিদ্র্যদুঃখদহনায় 
নমঃ শিবায় ॥৩॥

চর্মাম্বরায় শবভস্মবিলেপনায় ভালেক্ষণায় মণিকুণ্ডলমণ্ডিতায় ।
মঞ্জীরপাদয়ুগল়ায় জটাধরায় দারিদ্র্যদুঃখদহনায় 
নমঃ শিবায় ॥৪॥

পঞ্চাননায় ফণিরাজবিভূষণায় হেমাংশুকায় ভুবনত্রয়মণ্ডিতায় ।
আনন্দভূমিবরদায় তমোময়ায় দারিদ্র্যদুঃখদহনায় 
নমঃ শিবায় ॥৫॥

ভানুপ্রিয়ায় ভবসাগরতারণায় কালান্তকায় কমলাসনপূজিতায় ।
নেত্রত্রয়ায় শুভলক্ষণলক্ষিতায় দারিদ্র্যদুঃখদহনায় 
নমঃ শিবায় ॥৬॥

রামপ্রিয়ায় রঘুনাথবরপ্রদায় নাগপ্রিয়ায় নরকার্ণব তারণায় ।
পুণ্যেষু পুণ্যভরিতায় সুরার্চিতায় দারিদ্র্যদুঃখদহনায় 
নমঃ শিবায় ॥৭॥

মুক্তেশ্বরায় ফলদায় গণেশ্বরায় গীতপ্রিয়ায় বৃষভেশ্বরবাহনায় ।
মাতঙ্গচর্মবসনায় মহেশ্বরায় দারিদ্র্যদুঃখদহনায় 
নমঃ শিবায় ॥৮॥

বসিষ্ঠেন কৃতং স্তোত্রং সর্বরোগনিবারণম্ ।
সর্বসম্পৎকরং শীঘ্রং পুত্রপৌত্রাদিবর্ধনম্ ।
ত্রিসন্ধ্যং যঃ পঠেন্নিত্যং স হি স্বর্গমবাপ্নুয়াৎ ॥৯॥

ইতি শ্রীবসিষ্ঠবিরচিতং দারিদ্র্যদহনশিবস্তোত্রং সম্পূর্ণম্।
_____________

আদ্যা স্তোত্র

আদ্যা স্তোত্র
ওঁ নম আদ্যায়ৈ ।
শৃণু বৎস প্রবক্ষ্যামি আদ্যাস্তোত্রং মহাফলাম ।
যঃ পঠেৎ সততং ভক্ত্যা স এব বিষ্ণুবল্লভঃ ।।
মৃত্যুর্ব্যাধিভয়ং তস্য নাস্তি কিঞ্চিতঃ কলৌ যুগে ।
অপুত্রো লভতে পুত্রং ত্রিপক্ষং শ্রবণং যদি ।।
দ্বৌ মাসৌ বন্ধনান্মুক্তিঃ বিপ্রর্বক্ত্রাতঃ শ্রুতং যদি ।
মৃতবত্সা জীববত্সা ষণ্মাসং শ্রবণং যদি ।।
নৌকায়াং সঙ্কটে যুদ্ধে পঠনাজ্জয়মাপ্নুয়াতঃ ।
লিখিত্বা স্থাপয়েদঃগেহে নাগ্নিচৌরভয়ং ক্বচিতঃ ।।
রাজস্থানে জয়ী নিত্যং প্রসন্নাঃ সর্ব্বদেবতা ।
ঔং হ্রীং ব্রহ্মাণী ব্রহ্মলোকে চ বৈকুণ্ঠে সর্ব্বমঙ্গলা ।।
ইন্দ্রাণী অমরাবত্যামবিকা বরুণালয়ে ।
যমালয়ে কালরূপা কুবেরভবনে শুভা ।।
মহানন্দাগ্নিকোনে চ বায়ব্যাং মৃগবাহিনী ।
নৈঋত্যাং রক্তদন্তা চ ঐশাণ্যাং শূলধারিণী ।।
পাতালে বৈষ্ণবীরূপা সিংহলে দেবমোহিনী ।
সুরসা চ মণীদ্বিপে লঙ্কায়াং ভদ্রকালিকা ।।
রামেশ্বরী সেতুবন্ধে বিমলা পুরুষোত্তমে ।
বিরজা ঔড্রদেশে চ কামাক্ষ্যা নীলপর্বতে ।।
কালিকা বঙ্গদেশে চ অযোধ্যায়াং মহেশ্বরী ।
বারাণস্যামন্নপূর্ণা গয়াক্ষেত্রে গয়েশ্বরী ।।
কুরুক্ষেত্রে ভদ্রকালী ব্রজে কাত্যায়নী পরা ।
দ্বারকায়াং মহামায়া মথুরায়াং মাহেশ্বরী ।।
ক্ষুধা ত্বং সর্ব্বভূতানাং বেলা ত্বং সাগরস্য চ ।
নবমী শুক্লপক্ষস্য কৃষ্ণসৈকাদশী পরা ।।
 দক্ষসা দুহিতা দেবী দক্ষযজ্ঞ বিনাশিনী ।
রামস্য জানকী ত্বং হি রাবণধ্বংসকারিণী ।।
চণ্ডমুণ্ডবধে দেবী রক্তবীজবিনাশিনী ।
নিশুম্ভশুম্ভমথিনী মধুকৈটভঘাতিনী ।।
বিষ্ণুভক্তিপ্রদা দুর্গা সুখদা মোক্ষদা সদা ।
আদ্যাস্তবমিমং পুণ্যং যঃ পঠেতঃ সততং নরঃ ।।
সর্ব্বজ্বরভয়ং ন স্যাতঃ সর্ব্বব্যাধিবিনাশনমঃ ।
কোটিতীর্থফলং তস্য লভতে নাত্র সংশয়ঃ ।।
জয়া মে চাগ্রতঃ পাতু বিজয়া পাতু পৃষ্ঠতঃ ।
নারায়ণী শীর্ষদেশে সর্ব্বঙ্গে সিংহবাহিনী ।।
শিবদূতী উগ্রচণ্ডা প্রত্যঙ্গে পরমেশ্বরী ।
বিশালাক্ষী মহামায়া কৌমারী সঙ্খিনী শিবা ।।
চক্রিণী জয়ধাত্রী চ রণমত্তা রণপ্রিয়া ।
দুর্গা জয়ন্তী কালী চ ভদ্রকালী মহোদরী ।।
নারসিংহী চ বারাহী সিদ্ধিদাত্রী সুখপ্রদা ।
ভয়ঙ্করী মহারৌদ্রী মহাভয়বিনাশিনী ।।

ইতি ব্রহ্মযামলে ব্রহ্মনারদসংবাদে আদ্যস্তোত্রং সমাপ্তং ।।

ওঁ নম আদ্যায়ৈ। ওঁ নম আদ্যায়ৈ । ওঁ নম আদ্যায়ৈ ।।

স্বপ্ন ঋণ

রাত এগারোটা ঊনত্রিশ
তোমার শরীরের পারফিউম মাতিয়ে তোলে ,
আমায় ।
হাতের পাঁচটা আঙ্গুল পিপড়ের মতো
তোমার নগ্ন শরীরে চলে ;
পর্বত থেকে নেমে আসা ঝর্ণাধারার মতো ।

সুখের আবেশে স্বপ্ন দেখি আমি ,
জিহ্বা ছুয়ে যায় তোমার বুক ;
বুক থেকে নাভি হয়ে , আরও নীচে ....
কয়েক লক্ষ ক্রোমোজোম তীব্র আক্রোশে
ঝাপিয়ে পড়ে একটা ডিম পাবার আশায় ।

বারোটা বেজে গেছে আমার ।
এখন দুচোখে শুধু তোমারই স্বপ্ন ঋণ ;
ভোরের ঘুম থেকে ডেকোনা আমায় ,
আমি স্বপ্ন দেখিনি বহুদিন ।।

বাসনার গুরুভার

বাসনার গুরুভারে শূন্য
     নীল  আকাশের ক্ষুব্দ প্রসারিত অনুভূতি
     প্রভাতের অরণ্য - শিশির ভেজা - বিহঙ্গ ওড়া
     বন্ধন খোলা বেণী নিংড়ে নিলো মুক্তির গোধূলী ।

অহংবোধের সত্ত্বা মহিমান্বিত
     কর্মিষ্ট জনতার নবীন সূর্যের মুখোশ
     জ্বল জ্বল করে মুছে গেলো - সহস্র নক্ষত্রের মধ্য হতে
     ধুমকেতুর মত ছুটে গেল বাসনার শূন্য গুরুভার ।

নগ্ন পদতলে বাসনার গুরুভার
     হাওয়ায় কেঁপে কেঁপে উঠছে মহাসেন ,
     নৃত্যরত লাস্যা সোনালী মেঘের মেয়ে
     অসীম বার্তাবাহী - এ ভুমাত্বের কুহেলিকা ।

প্রণয় আবেদন ছুয়ে যায় তার চিরন্তন  যৌবনসত্বায় ।।

~~~ ০০০ ~~~

কস্তুরী

কস্তুরী !!, 
তোমার জন্ম কোথায় ?
শাল-সেগুনের ছায়ায় তোমার আসা যাওয়া
সুন্দর গোরী গোরী চেহারা
রূপসী রাণীর দীপ শিখা;
অন্তরের অনিবার্য আকর্ষণ।
চিতল হরিণের অতল নাভিমূলে ?

কচি জীবনের প্রথম প্রেমের আকর্ষণ ,
চঞ্চল হৃদয় শব্দের অনুরণন ;
প্রকোষ্ঠ বন্ধী হয়ে প্রেমিক মনে এসেছে
স্বপ্নের বসন্ত; খুঁজে বেড়ায় ----
গলি হতে গলি ; কাব্য হতে কবিতায় ,
উপন্যাসের পাতায় পাতায় ;

তবুওঃ ম্রিয়মান হয়ে দাঁড়িয়ে থাকি ----
তার পরই চোখে ভাষে
এক দুরন্ত হরিণী রূপ; --- ধীর স্থির
শান্ত ভাবে ---- গুনতী পদে
চলছে বেয়ে অস্তরাগের তরী ;
করন্তে মিহিকায় ভেজা ফুল চয়নে
প্রভাতে বেস্ত ---- আমার হৃদয় কস্তুরী ।

হে মোর সহ কস্তুরী !
তুমি রাতের অন্ধকার নও , ----
----- জ‍্যোৎস্নার অম্লান হাসি ;
তোমার অনবদ্যাঙ্গী প্রবহমান হিয়ায় আমি ;
অনপেক্ষ প্রেমিক হয়ে রব
---- এ শতাব্দীর শাশ্বতকাল পরেও ।

––– ০০০ –––

মহাশ্বেতা

ধুম্রকুট নয় ---
কুয়াশার বুকে ভর করে
আস্তে আস্তে নেমে আসে
             - আমার মানসী ;
তুমি তো সরস্বতী নও
             - তুমি আমার হৃদয়ের মহাশ্বেতা ।
নব কলেবর উন্মোচন করে
তুমি এসে দাঁড়ালে আমার সামনে
বন্ধু ! এতো স্বপ্ন নয়
                  – বাস্তবের আলিঙ্গন ;
রূঢ় পৃথিবীর দাহ্য মাটিতে আমার
                 প্রেয়সীর স্বপ্ন বিচরণ ।
ক্রমে ক্রমে এক বিশাল বিলুপ্ত পথ অতিক্রম করে
বাসর ঘরের আনন্দ যেন
                - জীবনানন্দের " লাশ কাটা ঘরে " ;
ভোলগা থেকে গঙ্গা হয়ে ফিরে আসে
                 কৈশোর সিঁড়ির গোঁড়ায় ।

~~~~~~~ 0000 ~~~~~~~~

অভিসারিনী

মিটি মিটি সন্ধ্যার আলোকে -----
আমি যখন দাঁড়িয়ে ছিলেম একা , ---
মধ্যবর্তী ঐ কালবাটে ; গা এলিয়ে ----
সন্ধ্যা সমাগতা , মিষ্টি মধুর দৃশ্য
                          অবলোকন হেতু ..........

দূর আকাশে তখন সবে
তারকারাজি ফুটে উঠেছে, -----
                   সেই নির্মল আকাশের বুক চিরে,
মনে হলো, --- কিছু বলবে আমাকে
                    তাই রয়েছি চুপচাপ দাঁড়িয়ে।

বলিল: "ও হে ! আজি তুমি একা ----
              তোমার প্রিয় সঙ্গীরা কোথায় (?)"

আমি উত্তর করেছিনু, ----
               ওগো সুন্দরের অভিসারিনী
                তোমারই বিধূমুখ দেখার আশে
                 রয়েছিনু যে দাঁড়িয়ে।

যাচ্ছ কোথায় অভিসারে ?
"চলেছি অভিসার হেতু ---
                  সুদাংশু পানে।"

ভাবছিনু, উত্তর হলো কোথা হতে !
ফিরিয়া দেখিনু, বলিছে এক তারকা
                    হাসিয়া আমারই পানে।

ফিরিছিনু যবে আমি ঋতানৃত জগতে
কর্ণিকাহীন আলোকাবলী বিছানো তনুমধ্য
তখনই জিজ্ঞাসিছে :--
                   "আজি এই উদাসী পথের বাঁকে
                     কি করিতেছ দাঁড়িয়ে (?)
                      ---- হে উদাসী !"

চমকিয়া আমি জিজ্ঞাসিনু তারে ----
                      "তুমি কে গো !!
আজি এই সন্ধ্যার মালতি-ভরা
গন্ধ-লুঠা তপস্যা ভঙ্গ করিলে মোরে।"

সেই ষোড়শী উত্তরিল মোরে ----
                        আমায় চিনিতেছ না !
আমি চলেছি অভিসারে, পূর্বরাগ 'পরে
                        তোমারই সনে।
আমি যে তোমারই অভিসারিনী -----
                         ----- অমৃতভাষিনী।
                         --- প্রিয়ংবদা।।

––––––

পরিণতি

মৃত্যুর ম্লান স্তুপে ;

     পুরু অথচ ঋজু মখমল সজ্জিত ---
     গুরুভার বাহিত পরিপূর্ণ মহিমময় ,
     রহস্যময় বনাঞ্চল ধ্বনিত হয় ।

যেহেতু : জুই ও কেয়ার সৌরভ তাকে চিনতে পারে,
              অর্ধনগ্ন স্তাপত্যরূপে মহাকীর্তি ।

তবুও : যৌবনের তাজা হাড়ের মধ্যে খেলা করে ,
              মৃত্যুর চিরন্তন অভ্যর্থনা ।

বিকীর্ণ হেমন্তের অলৌকিক হাসিমুখের শেষ পরিণতি ।।


~~~ ০০০ ~~~

শূন্যতা

এক বিশাল শূন্য প্রান্তরের সামনে দাঁড়িয়ে ;
(এই) শূন্যতার সাক্ষী জ্যোৎস্নার ম্লান হাসি 
                                     নক্ষত্রমালার সহচর
                                     দোসর বললেও ভুল হবে না ;

অচেনা অন্ধকারের বিশালতা --- ভালোবাসার কামধেনু
যেন নববধুর প্রথম বাসরঘরের সলজ্জ মুখ
কাঁচের ঘরে বন্দী নিস্তব্ধ গাঁয়ের চঞ্চল শহর --
আমার চঞ্চল হৃদয় অজানা বাসনায় আজ সপ্তনদীর সুরময় পদ্য 
স্বপ্নের বাসরঘরের আঙ্গিনায় নববধুর সঙ্গে প্রথম প্রনয় অপেক্ষায় ;
অন্যথায় - ভালোবাসা রয়ে যাবে শুধু এক স্বপ্নময় "অধরামাধুরী"।

দশতলায় ভালোবাসা !
                            আমি নিচে ফুটপাতে শুয়ে 
                            কুকুরের সঙ্গে ঘুম ভাগাভাগি করি ;
তবুও ! 
ভালোবাসা ভাগাভাগিতে রাজি নই ;
ভালোবাসার শূন্যতা যতই  প্রাংশুময় হোক ।  

----- ০০০ ----- 

প্রতিভা

প্রতিভা,
তোমারে কখনো তো আমি দেখিনি
তবুওঃ তোমার স্বপ্নালু নীলাভ আঁখি
সন্ধ্যার অন্ধকারে ভেসে ওঠে;
পল্লবিত করে শীতে ঝরে পড়া পাতা,----
বর্ষার তেজে সচেতন হয়ে ওঠে,
বসন্তের দক্ষিণা হওয়ায় সবই ----
গুলিয়ে যাচ্ছে, শুধুই ------- ।

প্রতিভার জ্বালায় পৃথিবীর কোণে
ডাক পড়েছে,
ধ্রুবতারা জ্বলে উঠেছে,
গ্রহান্তরে খুঁজে বেড়ায় -----
সেই কোমল কোরক অব্যক্ত অবয়ব;
লুকানো গভীর মর্মর ব্যাথা -----
নিশ্চল হয়ে দেখি।

প্রতিভা,
তোমার মেঘের মতো এলোমেলো চুলগুলি
সৌরভের মাদকতা --- সর্বশরীরে ;
প্রতিভা! সত্যি চুরি হয়ে গেছে
শরীরের রিক্ত জীবনের মৃত্যু মেদ;
ঝলমলে বর্ণময় কান্তি;
উজ্জ্বল হৃদয়।

প্রতিভা, নির্জন প্রকোষ্ঠে ফুটিয়েছে
তার অ'মৃতহীন উঠতি শরীর
উষ্ণ আলিঙ্গনের তৃপ্তিতে ভেজাতে।

তন্দ্রার অলীক আকাশগঙ্গার সিঁড়ি
হঠাৎ ছিটকে গেলো -----
বাস্তবের কঠোর ধূলিতে;
পরখ করতে পারিনি সৃষ্টিসুধা
কারণঃ
সে ছিল আমার প্রিয়া প্রতিভা।

––––––––―

অনুসূয়া

অনুসূয়া !!

গাঢ় মেহেদির লাল রং 
- তোমার মোহনাস্থিত অমৃত জলে ;
আমার স্রোতহীন শুষ্ক নদীতে
                      - অজ্ঞাত সোহাগের স্বপ্ন ওড়ায় ;
                         আজ্ সারারাত ।
যন্ত্রনার বাসনা স্নাত সুপ্ত অভিসার ;
ভেসে যায় প্রীত সমুদ্রের লোনাজলে ।

অনুসূয়া !!

তোমার ঠোঁটের অলীক হাসির অঞ্জলি ;
- যেন বাসন্তী প্রভাতের ত্যাক্ত বসন ;
আত্মহননের জলন্ত সিগরেট
                     - অন্তিম টানে ; তন্বী - বন্ধন ছিন্ন হয় 
                        শূন্য আঙ্গিনায় ।
কৈশোরে দেখা নিস্তরঙ্গ দৃশ্যের মতো
ফুটে ওঠে স্বর্গগঙ্গার ছায়াচিত্র ।

অনুসূয়া !!

তোমার সুমুদ্র জলের সফেন ফেনা 
আর অবিমিশ্র গন্ধ ; 
প্রণয় পাগল বাতাস
আর স্বপ্নবিভর দৃশ্যভুবন ;
সবই তোমার ভালোবাসা নামক ছবির
                      - শেষ অঙ্কের সওগাত  ।।

--- ৹৹৹ ----

রাত্রির আবেশ

অন্ধকারের গভীরতা কানাকানি করেঃ
নিস্তব্ধ কঙ্কনার কঙ্কন ধ্বনি
কন্ঠের মাধুরিমায় একাত্ব;
বড় ভালো বোধ হয়।

বৈদ্যুতিক ল্যাম্পের আলোয় একাকী
ঘুমহীন ঢুলু ঢুলু চোখে
তন্দ্রার আবেশে -----
কঙ্কনার স্বপ্নে বিছানো বিছানায়;
হঠাৎ একরাশ সৌরভে
ঘরের অন্ধকার নেমে এলো; -----
সম্বিৎসারে অন্য আর একটা
রাত্রির আবেশ-----
খোলামেলা ভাবে জেগে ওঠে
কাত হয়ে জেগে শুয়ে থাকা
বিছানা-প্রেমিকের চোখে।

উঠে একটু গলাটা ভিজিয়ে নেয়,
আবার শুয়ে পড়ে; নড়ে আর উঠে
সারা রাত্র ; তবুওঃ  ;
একাকী উপাধান-ক্রীড়নক করে
পড়ে থাকে।
স্বপ্নের মাদকতা অস্পষ্ট হয়ে আসে
ঈস্পিত বাস্তবকে মেনে নিয়ে।

তারপর সে সুখ খুঁজে ফেরে-----
অসীমাকাশের মহাশূন্যের
অন্তহীন মৈথুনতার পথে;
কোন সে এক অজানা
মধুযামিনির ঘোরে।

––––––

শ্রাবণী

আমি চলেছি  পথের বাঁকে
হারিয়েছি তোমাকে শ্রাবণী !
শ্রাবস্তী নগরী পার হয়ে তুমি
           ত্রস্তা ধরণীর বুকে মিশেছ।

তুমি সুখী হয়েছ তো ?

ভালোবাসার মহার্ঘ্যভাতা পাইনি আমি
শুধু করের বোঝা চেপেছে।
শোধ দিতে না পেরে - হয়েছি দেউলিয়া ;
শুয়েছি ধুলার প্রাসাদে -
শুধু  তোমারই জন্যে - শ্রাবণী !

তুমি সুখী হয়েছ তো ?

আজ এই ক্রান্তিকালীন সময়ে
দেখে যেও একটি বার , অমৃতশয়ানে
আছি যে তোমারি পথ চেয়ে
 বৃথা  ফিরায়ো না -- শ্রাবণী !!

আমি  যে ভালোবাসার মহার্ঘ্যভাতা পেতে চায়।

--- ০০০ ---

এক টুকরো কয়লা

গঙ্গার বুকে ভেসে চলেছে
                   --- এক টুকরো কয়লা
                        নাম   -   কাঠ কয়লা ।

তার জন্ম ইতিহাস আমার জানা নেই ।

তুমি কি জান ?

উজ্জ্বল অগ্নির প্রজ্জ্বল কাষ্ট
           সপ্রপাতে বয়ে চলেছে
           গঙ্গা বক্ষে ;
           সুমুদ্র অভিমুখে !

অনন্ত সুমুদ্র ............ !!

--- ৹৹৹ ---

কথা দিলাম

নিত্য আমি আমার মতো
যায় যদি যায় চলে.....
সত্য বলছি তোমার সাথে
বন্ধু ! দেখা একবার হবেই।

তুমি যদি যাও উড়ে
আমি যাবো সাথে
সত্য বলছি তোমার সাথে
বন্ধু ! দেখা আমার হবেই।

বন্ধু !
তুমি যদি থাকো সাত সমুদ্র পার
আমি কথা দিলুম,
যাবো সেথায় তোমার সাথে
ভাসবো এক তরনী 'পর।

বিদ্যুৎ

অগ্নির বিদ্যুৎ ঝলকে
ঝল্'কে উঠলো তার মুখ ;
এক সোনালী রোদ্দুরের হাসি ছড়ানো
সুন্দর অবলীলায় গাড় থেকে গাড়তর ।

অন্ধকারের পথে নেমে এলো
জোনাকীর ঝিঁ ঝিঁ রবে ;
একবুক সাহস আর অভিমান ;
আরক্ত রক্তিম মুখে পূর্বরাগের
                   বিদ্যুৎ স্ফুরণ ।

জলন্ত সূর্যের দগ্ধ অগ্নিপিন্ডের মতো
দাউ দাউ করে জ্বলছে
এই বুক , এই হৃদয় .... ।

~~~ ০০০ ~~~
 

অভিলাষী হৃদয়

তোমার  অভিলাষী হৃদয় !!
          আমার শুষ্ক ভালবাসার মরুভূমিতে
          তোমার নরম হাতের স্পর্শে বান ডেকেছে ;
          কামনার নিরন্তর স্পর্শমনিতে ফুল ফোটে  ;
          বন- দোয়েলের পাতা-পুস্পে মাখা মাখির কাহিনী।
         
চতুর্দিকে ফাল্গুনের হাওয়া -------
                        আলগোছে স্বর্গ গড়ে দেয় তোমার
                        দ্বিধাহীন তৃষিত ভালোবাসা ।

তোমার  অভিলাষী হৃদয় !!
          দুরস্থ স্পর্শমণির মতো আমার জেগে ওঠে
          অতিন্দ্রীয় সুখ-শয্যায় তোমার রতি প্লাবন
          অসংকোচে হয়ে ওঠে হাঘরে ঊর্বশী ;
          যৌবন পূর্ণতা পায় প্রজাপতির কল্যানে ।


          ~~~~~ ooo ~~~~~

সাগর বেলায়

সাগর বেলায় সদ্য ফোটা গোলাপ হাতে
মেয়েটি - মনের এক অজানা তীব্র বাসনায় -
উন্মুক্ত অম্বরতলে - ঢেউতোলা ফেনারাশির
সুভ্রতায় দাঁড়ায়ে।
স্নানের পূর্বে উষ্ণতার অনুভব
চোখে চোখে ; অস্পষ্ট কন্ঠস্বরে মৃদু গুঞ্জরণ।
ক্ষুদ্র বালিহাঁস উস্কে দিলো অন্তহীন প্রেমাকাঙ্খা
বিতৃষ্ণা রাতে খেয়েছে - লজ্জা ;
গিরিশ্রেনীর ঝর্ণায় কুয়াশা স্নাত - বেয়ারাগুলো
বিয়ে করেছে -- পরিনীতা নয় , প্রেমিকা ;
                                                --- ব্যাস।

অনেক স্মৃতি জড়িত দর্পনের সঙ্গে
উত্তেজনায় মগ্ন - তীব্র কৃত্রিম সুখে ;
প্রেমের দীপশিখা নিভে এলো
সপ্ত সুর লুপ্ত - বেসামাল ;

নিরালা ঘরের কপোত কপোতী ।

------------ ০০০ ---------------

স্বপ্ন

" আর সব মরে , স্বপ্ন মরে না - " (সু গ)
সুকান্ত , দীনেশ , রণেন' রা মরেনি 
 তাঁদের আদর্শ অমরত্বের আশ্বাস ;
আমাদের নিশ্বাস কথা বলে
সুভাষ , সুর্যসেনদের সোনালী স্বপ্ন ;
কঙ্কাল হতে লজ্জা নেই
        - যদি সেখানে লুকিয়ে থাকে গোপন স্বপ্ন ।

অমাবস্যার শ্ম্শানের - অদ্ভুত অন্ধকার
সাধক স্বপ্ন দেখে বাঙময়তার
টেবিলে মুখ গুজে কত ছেলে স্বপ্ন দেখে
ভবিষ্যতের স্বপ্ন - সে তো মিথ্যা নয় ।

সন্ধ্যার সূর্য স্বপ্ন দেখে - ঊষার অরুন হবে সে
কবি স্বপ্ন দেখে গোপনে - ভালোবাসার ;
ভালবাসা ছাড়া তার সৃষ্টি অধুরা ।

পাহাড় চূড়ায় উঠে তানজিন স্বপ্ন দেখে
একদিন সে আরও উপরে উঠবে
মিশে যাবে আকাশের নীলিমায় ;

আর আমি স্বপ্ন দেখি - সুনীলের মতো
পাহাড় কেনার নয় - বহমান নদীর ভালোবাসা
হ্যাঁ , ভালোবাসা কিনব আমি ।

~~~~~~ 000 ~~~~~~

মালিশ

তোমাকে সেদিন দেখলাম
                       একটা মিছিলের মধ্যমণি হয়ে
                       চলেছ সবার আগে ;
কত শত নারী-পুরুষ ছেলে-বুড়ো
                       তোমারই জয়গান করছে ........ ।

বনের বটবৃক্ষের সদর্প ঘোষনা ;
                       'সকল শিয়ালের একই রা' '
                                    হুক্কা হুয়া .................. ।
দিগন্তে রাঙা সূর্য নিভে যাচ্ছে
                        লালিমায় আঁকা ছবি তারই প্রমান ।

যন্ত্রযুগের যান্ত্রিকতায় পরিপূর্ণ সমাজ ,
                        সরীসৃপের মতো ঊরগ্ .........
দৈত্যের মতো নোংরা দাতের দংশন
বড় ক্ষতের দগ্-দগে ঘা' ;
                         সকলে মালিশে ব্যস্ত ।

প্রেম - ভালোবাসা - স্নেহ - মমতা অপসারিত ;
তবুও তুমি আমায় বললে একটি কথা -----
                         ' আমরা একে অপরের '
                                       সত্যি কি ?

আকাশের ধূমকেতুর যেন সহসা
                         মর্তে আবির্ভাব ঘটলো ;
দীর্ঘ ব্যবধানে যৌবন জোয়ারের পর ।।

~~~~~~ ০০০০ ~~~~~~~

পুঞ্জীভূত সত্য

বন্ধু ! !
আমি দেখেছি
পুঞ্জীভূত সত্য ----- মিথ্যার ঝলকানিতে
ভালোবাসায় আঘাত হানে ;
ক্রমাগত চিতনাল জ্বলে যৌবনের।

বন্ধু ! !
আমি দেখেছি
বাহাদুর বিশ্বকর্মারা ----- জ্ঞান ঝুলিতে সিঁধ কেটে
কেজোদের দলে নাম লেখায় ;
নবযৌবন কুলিদের স্বপ্নে ভরা লণ্ঠন।

বন্ধু ! !
আমি দেখেছি
ইন্দ্রগণ নারীসঙ্গলাভে কুমারটুলির কাতারে
কাদার পিন্ড হাতে অপেক্ষমান ;
চেলিবেষ্টিত কন্যার কুষ্টিতে অশ্রুজল ।

বন্ধু ! !
তুমি দেখেছো কি -----
শত সন্ন্যাসীর আক্কেল দাঁত ;
মিলনান্তে কুসুমিত ----
মন - বেনী পৌরুষ নদীতে বিসর্জিত ।।

--- ৹৹৹ ---

ভালোবাসার বৈধব্য

ভালোবাসার বৈধব্য হয় না ;
তোমার ছন্দপতন আমার জীবনে ......
ভালোবাসাকে করেছে আরও স্বচ্ছ
আরও পরিপূর্ণ।

সশব্দে আগমন -------- নিঃশব্দে নির্গমন তোমার ;
কিন্তু, আমার জীবনকে করেনি কোনো পরিবর্তন .......
ভালোবাসার কোনো শুন্যতা নেই
হয়েছি সম্পূর্ন।

তোমার ছন্দপতনে অন্যজন ;
ভালোবাসার ফুলে অভিনন্দিত হয়েছি বারবার,
আমিও স্বাগত জানিয়েছি ; কারণ .......
ভালোবাসার বৈধব্যকে স্বীকার করিনি আমি।।

--- ৹৹৹ ---

ছুটি

তুমি এসেছিলে .......... 
কবে ?

কেন ! সেই বৈশাখের তপ্ত দুপুরে
দখিনা জানালা বেয়ে
শিরশিরে ঘুম ঘুম হাওয়া জড়ানো
রঙীন পাতলা শাড়ীতে।
তোমার গোল - পীনোন্নত মুখ ভালোবাসার আহব্বায়ক।
যেখানে  অম্বরহীন একজোড়া ঠোট , শ্রোণীদেশ ---
মিষ্টি নদীর মন্দ ধ্বনি আমি শুনেছিলাম।

তুমি বলেছিলে -----  " কালই শেষ "
" ছুটি শেষ ! "
" থাকো না আরো ----- একদিন ----- ", বিফল অনুরোধ।

বাহু বন্ধন ছিন্ন করে সোজা হলে।
ভেবেছিলাম এমনি করে চিরকাল
তপ্ত বৈশাখী দুপুরে দু'জনে মিলে
আম কুড়াবো -----  মাখাবো ----- সুখে খাবো ,
কিন্তু " ছুটি !! "

চলন্তিকা ট্রেনে চেপে তুমি
অনন্ত হাওয়ায় মিশে গেলে।

জানালার কবাট বন্ধ
অসীম আকাশ সসীমতায় নিঃশেষ ।।

----- ০০০ -----

বয়:সন্ধিকালীন মুখ

বয়:সন্ধিকালীন মুখ ,

বড় আশ্চর্য আনন্দের বিশ্ববৈভব

খুঁজে ফেরে ,  বিকালের রাস্তার চৌমাথায় ;
প্রেমিক-প্রেমিকার কাতর চোখে
রাত্রির ভাব - প্রতিমাকে  উৎসর্গ করে ।

জাদুকরী বৃক্ষকান্ডে জীবন মুক্তি ---


তৃষ্ণা আর অনুশোচনায় জড়ানো নবীন রাত্রি

হৃদয়ে-ওষ্ঠে উষ্ণতার অনুভব ;
চশমার ফাঁক দিয়ে সব সিদ্ধির
নগ্ন অধিশ্বরের নির্মলতার নোংরা চিৎকার ।

কৃতঘ্ন আলো জ্বলে তার বিষাক্ত দাতের উপর

শয্যায় আত্কে উঠে নিদ্রার খোলস ভাঙ্গে ।

অনন্ত স্বপ্নের আমন্ত্রণ -----


ক্ষুধা, মিথ্যা ও দারিদ্রকে সম্পদ করে

জলমগ্ন শবের মতো ভেসে যায় ।

সূদুর নীহারিকার মধ্যে তবুও: একদিন

সেই রহস্যময় রাস্তার চৌমাথায়
মাতৃত্বের ভিজে পোশাকে, গর্ভগৃহে ফেলে
কৃতঘ্ন স্নেহের বিষাক্ত নিশ্বাস ।

~~~~ ০০০০ ~~~~~

মূল্যহীন ভালোবাসা

মূল্যহীন ভালোবাসা -- তো মূল্যহীন পৃথিবী
কঠিন বাস্তব তারই কল্পচিত্র ,
ভালোবাসা আজ হারিয়ে যায় শরীরের শিল্পতায়
মনের হৃদ্রতা খুবই স্বল্প ;

হাপর চলে হৃদয়ে - শত সহস্র হাপর
কামার-শালার অগ্নি নির্গমন লাল শিখা ;
এই অগ্নির তেজ এমনই যে ,
           সব ধরনের লোহা এখানে গলবেই ------।

 তুমি বসে আমার সামনে -- আপন কাজে
আমি আমার মতো , আর ----
ভালোবাসা !! এখানে উদ্বায়ী ।

তবুও আগুন এসে গ্রাস করে --- দুজনকেই
মিশে যায় এ-ওর শরীরের
উষ্ণ ঘ্রানের শিল্পতা মেশানো ছবি ,
শান্ত এখন, অশান্ত নদীর তুফান স্নানের শেষে...... ।

তবুও মনে হয় , ভালোবাসা !!  
সে তো মূল্যহীন ।।

--- ৹৹৹ ---

ভালোবাসার মানে

ভালোবাসা মানে
উদাসী বাঁকে হারিয়ে যাওয়া
এক ঝাঁক বালিহাঁস।
ভালোবাসা মনে
মুক্ত আকাশে ডানা মেলা
পেঁজা পেঁজা এক খণ্ড সাদা মেঘ।
ভালোবাসা মানে
গভীর সমুদ্রের -- তট থেকে
দেখতে না পাওয়া ওই দিগন্ত রেখা।
ভালোবাসা মানে
অমাবস্যার দুর্যোগপূর্ণ রাতে
হঠাৎ দেখতে পাওয়া এক পথিক।
ভালোবাসা মানে
মরুভূমিতে পথ হারা এক তৃষ্ণার্ত পথিকের
হঠাৎ ঝরে পড়া এক পশলা বৃষ্টি।
ভালোবাসা মানে
দুর্যোগ ভরা রাতে --
তুমি ছিলে না সাথে।
ভালোবাসা মানে
বৃষ্টি ভেজা রাতে --- তুমি দূর হতে
একাকী হৃদয় ছুঁয়ে --- এঁকে দিলে ভালোবাসায়।।

প্রতিকৃতি

মুখ থুবড়ে পড়ে আছে একটা বড় বটগাছ ,
পাতাঝরা পোড়ো গাছের ডালপালা
ছেঁড়া ক্ষত বিক্ষত শেকোড়ের কান্না
পেশীর মধ্যে মৃত্যু লুকিয়ে আছে , তবুওঃ
পৃথিবী শুধু ওগরাচ্ছে কালো ধোঁয়া ।
স্নাযুগুলি শিথিল হয়ে আসছে .....
মৃত্যুর কল্পনা ভাস্বর স্মৃতির প্রতিকৃতিতে
সত্যের বাকরুদ্ধতা মুক্তির অপেক্ষায় আজ অবরুদ্ধ ।।

বেতার সুরের মূর্ছনা তোলে সপ্তকির তালে
স্মৃতির প্রতিকৃতি আলো আধারিতে খেলা করে ।
আমরা স্বপ্ন দেখি মাথা-মুন্ডুহীন , অলীক
সপ্ত আসমানের মতো অদৃশ্য সব স্বপ্ন ।
দর্পনে নিজস্ব প্রতিকৃতি দেখে শিউরে উঠি ,
পোড়া মুখ - ক্ষত বিক্ষত হৃদয় - শান্ত বিবেক ।।

~~~~~ ০০০০০ ~~~~~

বেশ্যা

জীবনের সুপ্রাভাতে আমার
সারস্বত্যের সমাধী দিলে তুমি :
ভালোবেসে কাছে টানা নয় --
  স্বায়ত্বশাসনের ধ্বজায় বলি ;

কৈশোরের কিশলয় পুস্তক স্পর্শ করি
যৌবনের স্বপ্ন বৈভবের দীপশিখা জ্বালে :
স্বচ্ছলতার, উচ্ছলতা ক্ষুধায় ম্রিয়মান আজ --
বয়:সন্ধির শিশু-শশী প্রতিবিম্বের স্মৃতি ভরে ।

যুগান্তরের ঘূর্ণাবর্তে ---- !
নিষ্ফলে সফল এক ফোঁটা জল 
প্রিজমছটায় অঙ্কুর - ধূসর দ্যূতির জাহ্নবী :
অতিবৃদ্ধ ডাবওয়ালার প্রচ্ছন্ন মুখ ক্রীড়নক ---
       কতিপয়ের হাস্যধ্ব্নিতে !

তাই কুয়াশার শিশিরে ভিজেছে হৃদয়
ঢিল ফেলা দূরত্বে ভালোবাসা
থেমে গেছে -- রুদ্ধ কন্ঠ -- রক্তে ---
অমাবস্যার কালি খাঁড়াই ;

গৌরী জীবন কালিমা লিপ্ত ফুটপাথে
কেটেছে বিষাক্ত সাপের দল :
মুমূর্ষু নীলদেহ যৌবন আজ ---
সমাজ দিয়েছে নাম --- বেশ্যা।
----- ০০০ ----- 

তোমায় বোঝা ভার

তোমায় বোঝা ভার !
কত কি লুকাও তুমি !!
অজানা বুকে কত কষ্ট চেপে
সহসা এসে দাড়াও সহাস্যে দুয়ারে ;
আমি এসেছি কি আসি নাই -- তবু
তুমি এসেছ -- একটু হাসি ঠোঁটের কোণে নিয়ে ।

তোমায় বোঝা ভার !
কত কি লুকাও তুমি !!
কাঁচা স্বপ্নের ঘুম ভেংগে দিয়ে
দাঁতের ফাঁকে আনন্দের স্মৃতি চিবোও তুমি ;
খাঁটি সোনার জীবনে সাদামাঠা গল্প ফেঁদে
ভাড়ের চায়ে শেষ চুমুকে দাও সিগারেটের টান ।

তোমায় বোঝা ভার !
কত কি লুকাও তুমি !!
খুঁজে ফেরো সত্যের মন্দিরে বারোমাস
শ্রান্ত দিনের ক্লান্তির শান্তি সুখ ;
বাঁকা ঠোঁটের কোণে ধারালো হাঁসি
ছয় ঋতুতেই আমি পাপ করতে রাজি ।

চার দেওয়ালে , সুখের গান গেয়ে বিছানায়
ভেংগে ফেলি আদরের গোলাপ কামিনী গন্ধ ।।

বিশ্বাস

যন্ত্রণাকাতর মানুষটি ,
পা টলতে টলতে হেঁটে এলো
আমার কাছে ;
বলতে পারেন 'সুখ আর শান্তি' 
কোথায় কিনতে পাই (?)
আমার বিশ্বাসকে করতে হবে সৎকার ।

আমি ভাগালাম পাগল বা মাতাল ভেবে ;
পরক্ষণে শুনতে পেলাম তার
এক করুন চিৎকার ।

মনটায় বেশ দাগ কেটে গেলো
সময় দৌড় দিল ——
যেনো বুনো ঘোড়া চাবুক খেয়েছে
বিশ্বাস ভঙ্গের !
শবযাত্রার খৈয়ের মতো
টাকার বান্ডিলটা ছড়িয়ে দিল সে রাস্তায় ।

অতীতের ভার ঘুচে গেছে
দুরন্ত সময়ের স্রোতে; 'সুখ আর শান্তি'কে 
সে কিনতে চেয়েছিল অতি সস্তায় ।

অস্তমিত হুরী

স্তোকনম্রা নগ্ন বুকে
অস্তমিত জ্বলন্ত সূর্য ;
পশ্চিমাকাশে হেলে পড়েছে ; ---
কিন্তু তার অগ্নিপিন্ড এখনো
হাতছানি দেয় লালিমায় ।

মনেহয়
     কোন একসময় এর তেজ
     বহু সবুজত্বকে নষ্ট করেছে ;
কিন্তু এখন ----- ?
     পড়ন্ত আকাশের মধ্য গগনে এসে
     ঠেকেছে ।

আজ
বরারোহা ভারে হুরী লজ্জাবনতা
     অব্যক্ত যন্ত্রণায় ;
স্তোকনম্রা নগ্ন বুকে -----
পুঞ্জি ভূত ব্যাথার রাশি
     অগ্নি হয়ে ঝরে ।

নিঃশব্দ পদচারণা


মাধবীলতা !


কি করবো বলো ?
ফুল যে ঝরে যায় !
হায় !!
সে কেন শুকায় !!!


রৌদ্র তপ্ত ক'‌‌রে খেলা করে ,
অলিরা অবিচল বিক্ষিপ্তভাবে ঘুরে ফেরে ,
শান্ত দিঘীর জলে হাঁস গুলি ভেষে চলে ;
আর ছায়াঘেরা বনবিথীতে
তোমার নিঃশব্দ পদচারণা ——— !

দুটি ফুল হাওয়ায় মনের আনন্দে
দোদুল দোলায় দোল খায় ;
আর দোয়েল সপ্তস্বরে বাদ্য করে --
এই শ্যাম পল্লব দলে আচ্ছাদিত শ্যামলী


এই বনবিথী ;


সুন্দর মনোরম ও মনোহারী ।

মাধবীলতা !
সহসা চিৎকার করে  জিজ্ঞাসিল


——— ওটা কি হলো ?


সুন্দর শ্যামলী মধ্যে একটা সুবর্ণলতা
ছিড়ে পড়েছে ; শুকিয়ে ঝরে গেল একটা ফুল ।
জানিনা কোন বৃক্ষের পুষ্প ওটা !
শুধু জানি আমার জীবনে

এ ছিল

তোমার নিঃশব্দ পদচারণা ।।


স্মৃতি

যাকে আমি মাথায় তুলে রাখি 

আদর করি আর খোরপোষ দিই 

আজ সেই বিস্বস্থ বন্ধুটাও 

বিদ্রোহের নিশানা রাখলো আমার পায়ের 

পেশীতে কাঁমড়ে  আর আঁচড়ে। 


যাকে আমি বেশী ভালোবাসলাম জীবনে 

সেও দেখাবে আর হাটবে মোটা অঙ্ক ;

পথে বসাবে আমাকে সহ বাকীদের 

করবে না কোনো আপোষ 

দিতেই হবে বড় খোরপোষ। 


যাকে মাথায় তুলে রেখে 

ভরিয়েছি অনেক আদর-এ 

বিশ্বাসের দূরত্ব বেড়েছে আমাদের 

সত্যকে নিচ্ছি আজ আমি সাদরে। 


ক্রমশ নাগালের বাইরে সরে গিয়েছো তুমি 

ছিনিয়ে নিয়েছো আমার সবকিছু 

নাম - ধাম ;

বেঁচে থাকি শুধু নিয়ে স্মৃতিকে 

আর তোমার পুরানো অ্যালবাম। 

আদর

 আমার আদর ছুঁয়ে যায় অমৃতার বুক 

আর ভালোবাসা ছুঁয়ে যায় মাটির গন্ধ 

প্রতিমার চক্ষু দান হয় 

ওর নগ্ন নাভির পাদদেশে 

যেখানে বৃষ্টি হয় অনবরত। 


ওর শরীর আমার অজস্র ভালোবাসার দান 

মুক্ত মন্দিরে বহনযোগ্য যন্ত্রনা 

অগুনতি ক্লান্ত  ক্রীতদাস ভালোবাসে 

তবুও নিঙড়ানো শরীরে 

ও ভালোবাসে আমাকে। 


সবুজ ঘাসের ভোর হয় সোনালী রোদ্দুরে 

শতাব্দীর একাকিত্ব আজ সৈকত পারে 

সীমারেখার বাঁধন হারা নুপুর ধ্বনি 

ক্লান্ত সূর্য ঘুমিয়ে পড়ে গোধূলির দেওয়ালে 

আর !!

তুফান নদীর ভালোবাসা স্নান সেরে ঘরে ফেরে 

রক্তিম আলোর বিচ্ছুরণ আর শুভ্র দ্যূতির সম্ভাষণে। 

বেশ্যা

                         বেশ্যা ----- বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম   সাধুর নগরে বেশ্যা মরেছে পাপের হয়েছে শেষ, বেশ্যার লাশ হবে না দাফন এইটা ...